কথায় বলে, ‘সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়।’ কেমন যেন দেখতে দেখতে 2022 সালটা কেটে গেলো। শুরু হলো নতুন বছরের অর্থাৎ, 2023 এর। এক বছরে কত কিছু হয়ে যায়, কত উথাল পাথাল, কত উত্থান পতন, কত ওঠা নামা। কিন্তু মানুষ কি সব মনে রাখতে পারে? মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা মানুষ মনে রাখতে পারেনা, যেগুলি মূলত তাদের জীবনের স্মৃতির পাতায় বিরাট দাগ কেটে যায়, সেগুলি মানুষ ভুলতে পারে না, থেকে যায় স্মৃতি হয়ে। গোটা 2022 সাল তথা নতুন বছরের শুরু হওয়া পর্যন্ত রাজ্যের সরকারি কর্মীদের মনে দাগ কেটে যাওয়ার মত একটিই বিষয় ছিল এবং আছে, সেটি হলো DA।
DA (Dearness Allowance) তথা মহার্ঘ্য ভাতা বরাবরই রাজ্যের সরকারি চাকরিজীবী তথা সরকারি কর্মীদের আলোচনার মূল বিষয় এবং আলোচনার শীর্ষে থাকার মত। কথায় বলে, ‘একবার না পারিলে দেখ শতবার।’ হ্যাঁ, এই অমূল্য বাণীটি যেন বারংবার মেনে চলেছে রাজ্যের সরকারি মহলের বিভিন্ন কর্মীরা। না হলে এতবার ডিএ মামলা বিভিন্ন ক্ষেত্রে হোঁচট খেয়েও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, তা রাজ্যের সরকারি কর্মীদের না দেখলে বোঝাই যেত না।
ডিএ নিয়ে কম হয়রানির শিকার হয়নি রাজ্যের সরকারি চাকরিজীবী সঙ্গে পেনশন ভোগীরা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতিসাধন করার চেষ্টা থাকলেও কেন যেন এই চাকরি কিংবা নিয়োগ এবং এই বেতন তথা DA এর ব্যাপারে সরকার আগাগোড়াই উদাসীন। তাই বিভিন্নভাবে এবং নানান স্থানে কর্মীরা তাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরে, উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ডিএ বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বকেয়া DA মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানায়। কিন্তু কার কথা কে শুনে? সরকারি কর্মীদের দিয়ে নানান কাজ করিয়ে নিলেও তাদের ঠিকঠাক সাম্মানিক এর প্রশ্ন যখন আসে তখন সবাই চোখ কান বুজে চুপ করে বসে থাকে। কথায় বলে, ‘কাজের সময় কাজী কাজ ফুরালে পাজি।’
তাই শেষমেষ কর্মীদের একটাই পথ বেছে নিতে হয়েছে, সেটি হলো আন্দোলন এবং বিক্ষোভ। আন্দোলনে এসে নিজেদের দাবি জানাতে থাকলেও হতে হয়েছে গ্রেফতার হতে হয়েছে হয়রানির শিকার। কর্মীরা তাই শরণাপন্ন হন রাজ্যের উচ্চ আদালত তথা হাই কোর্টের। সেখানে মেলেনি কোনো সুরাহা, তারা পাইনি কোনো সুফল। তাই সবার শেষে কর্মীরা তাদের মাথা ঠেকালেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত তথা সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু সেখানে গিয়েও শুধু গুনতে হলো তারিখের ওপর তারিখ।
কিন্তু কথায় বলে, হাল ধরে রাখলে সফলতা আসবেই। সুপ্রিম কোর্ট একমাত্র ভরসা। এবং সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া রায় রাজ্যের সরকারি কর্মী তথা পেনশন ভোগীদের পক্ষে ইতিমধ্যে ঝোলা শুরু করেছে এ নিয়ে সন্দেহের কোনো রকম অবকাশ নেই। সঙ্গে সরকারি কর্মী ইউনিয়নের ইউনিট ফোরামের কনভেনর দেবপ্রসাদ হালদার এদিন নতুন বছরের শুরুতে জোর দিয়ে বলেছেন যে, গত 5-6 বছর ধরে যে মামলা ঝুলে রয়েছে তার অবদানের পালা। এবং কর্মীদের নিশ্চিত থাকতে বলেন যে, এবার রায় সরকারি কর্মী তথা পেনশন ভোগীদের পক্ষেই থাকছে।
কিন্তু এদিকে আবার অন্য সমস্যা। একদিকে সরকারি কর্মী মহলে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে ডিএ বাড়ানোর তাগাদা এবং ঠিক অন্যদিকে রাজ্যের রাজকোষ তথা অর্থ ভান্ডারে এখন খরার মাস চলছে। এদিকে রাজ্য আদালত বারংবার কর্মীদের ডিএ এর মামলাকে যুক্তিসঙ্গত বললেও এটিও অস্বীকার করছেন না যে ঠিক এই মুহূর্তে সরকার এই পুরো DA মিটিয়ে দিতে গেলে তা কখনোই সম্ভব হবে না। কিন্তু তা বলে কি কর্মীরা তাদের মহার্ঘ্য ভাতা থেকে বঞ্চিত থাকবেন। অবশ্যই না।
তারপর হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের চোখ ভালো করে খুলে দিয়ে এই DA এর ব্যাপারে ভাবতে বলেছেন। উল্লেখ্য যে, মে মাসে ডিএ মামলায় আগামী তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারকে বলা হয়ে বকেয়া ডিএ এর অর্থ মিটিয়ে দিতে। এবং এর ভিত্তিতে রাজ্য সরকারও হাই কোর্টের কাছে একটি রিভিউ পিটিশন জমা করে এই বলে যে একেবারে এই DA মেটানোর দাবি রাজ্য সরকার মানতে পারছেননা।
যাইহোক, এভাবে জল গড়াতে থাকে, এরপর কতবার সূর্য উদিত হয়েছে এবং অস্ত গেছে তার হিসেব নেই। শেষমেষ আস্তে আস্তে এবং অল্প অল্প করে এই মহার্ঘ্য ভাতা তথা DA মেটানোর পক্ষে থেকেছেন সরকার পক্ষ। রাজ্যের অর্থ ভান্ডার যেভাবে শূন্য হয়ে পড়ে আছে তাতে করে যদি এক বারে সব ডিএ মেটানোর পথে হাঁটে সরকার তবে রাজ্যে অকাল পড়তে পারে। তাই, তাই ধীরে হোক, সুস্থে হোক, আস্তে হোক এবং কিছুটা দেরিতেই হোক নতুন বছরে একটু হলেও আশাবাদী হতে পারেন কর্মীরা।
ভবিষ্যতে আপনি যদি এজাতীয় আরো নানান খবর পেতে চান তবে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সঙ্গে। পাশাপাশি এখানে রাজ্যে তথা কেন্দ্রের নানান চাকরি তথা নিয়োগের আপডেট, বিভিন্ন প্রকল্প এবং কর্মসূচি ইত্যাদি ঘোষণা পেতে পারেন।
FOR MORE NEWS: CLICK HERE
OUR TELEGRAM CHANNEL: JOIN HERE