প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও রাজ্যের পোস্ট অফিসের নিয়োগের হাড় হিম করা দুর্নীতি চোখে পড়লো। উল্লেখ্য, ভারতীয় পোস্ট নিয়োগ (India Post Recruitment 2022) এর পক্ষ থেকে প্রতি বছরই রাজ্যে নিয়োগ করা হয় অসংখ্য পরিমাণে পোস্ট অফিসের কর্মী। গত কয়েক বছর রাজ্যের এই পোস্ট অফিসের নিয়োগে দুর্নীতি চোখে পড়লে মনে করা হয়েছিল যে, পরবর্তীতে হয়তো দুর্নীতি কিছুটা হলেও কমতে পারে। কিন্তু গত সব বছরের নিয়োগের দুর্নীতিকে হার মানিয়ে এবার যে পরিমাণ অস্বচ্ছতা চোখে পড়লো নিয়োগ ক্ষেত্রে তাতে চোখ কমালে ওঠারই কথা।
এবার 2022 সালে ভারতীয় বিভাগ (India Post) এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের সার্কেলে বেশ কয়েক হাজার শূন্যপদে পোস্ট অফিস কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। এই নিয়োগের মাধ্যমে মূলত রাজ্যের পোস্টাল সার্কেলে নিয়োগ (WB Postal Recruitment 2022) এ বিভিন্ন পোস্ট অফিসে গ্রামীণ ডাক সেবক পদে কর্মী নিয়োগ (WB GDS Recruitment 2022) করা হয়। কিন্তু তাতে লক্ষ্য করা যায় যে, যারা যোগ্য ও উপযুক্ত প্রার্থী তারাই নিয়োগ পায়নি। নিয়োগ পেয়েছে সব অসাধু ও দুর্নীতিগ্রস্ত চাকরি প্রার্থীরা। কিন্তু কীভাবে এমনটা হলো। নিয়োগ ক্ষেত্রে এত বড় জাল চক্র কীভাবে সম্ভব? এর উত্তর লুকিয়ে আছে এই চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায়।
কীভাবে নিয়োগ করা হয় পোস্ট বিভাগে?
ইন্ডিয়া পোস্ট এর পক্ষ থেকে সারা রাজ্য জুড়ে আয়োজিত এই পোস্ট অফিসের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো রকম লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়না। শুধুমাত্র মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে সরাসরি নিয়োগ করা হয়ে থাকে এই চাকরিতে। আর ঠিক এখানেই দুর্নীতি টা হয়ে থাকে। অনেকের মাধ্যমিকের প্রাপ্ত নম্বর নগণ্য ও খুব কম থাকা সত্বেও তারা জাল মার্কশিট বের করে টাকার বিনিময়ে এবং ছিনিয়ে নেই যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি।
কীভাবে দুর্নীতি হয় পোস্ট অফিসের নিয়োগে?
সারা দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে জাল মার্কশিট বের করার জাল চক্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেখানে টাকা বিনিয়োগ করলেই পাওয়া যায় মাধ্যমিকের নকল ও অবৈধ মার্কশিট এবং সার্টিফিকেট। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু চাকরি প্রার্থীরা বিশেষ করে বিহার ও উত্তর প্রদেশ স্টেট বোর্ড এর জাল মার্কশিট চক্রের থেকে অনেক টাকা বিনিয়োগ করে তাদের জাল মার্কশিট বের করে নেই এবং অংশগ্রহণ করে এই পোস্ট অফিসের নিয়োগে। সেখানে তারা 3-5 লক্ষ টাকার বিনিময়ে পেয়ে থাকে মাধ্যমিকের মার্কশিট যেখানে ইচ্ছেমত নম্বর নিয়ে থাকে তারা। এক একজনের নম্বর হয়ে থাকে 94 থেকে 99 শতাংশ। এবং বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে 100% নম্বর পেয়ে থাকে তারা যা রীতিমত অসম্ভব ও অবিশ্বাস্য মনে হলেও আসলে এমনটাই ঘটে আসছে।
কত টাকার দুর্নীতি হয়েছে পোস্ট অফিসের নিয়োগে?
প্রতি বছরই কম বেশি দুর্নীতি হয়ে থাকে পোস্ট অফিসের এই গ্রামীণ ডাক সেবকের নিয়োগে। কিন্তু এবার এর টা সব রকম দুর্নীতিকে হার মানলো। সারা রাজ্য ব্যাপী জাল মার্কশিট চক্রে যা খরচ হয়েছে তার পরিমাণ প্রায় 40 থেকে 50 কোটি টাকা। এক একজন অসাধু চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে জাল মার্কশিট পিছু নেওয়া হয় প্রায় 3 থেকে 5 লাখ টাকা। এবার সেই চাকরি প্রার্থীদের সংখ্যা হাজারের ঘর পেরিয়ে বহু দূর চলে গেছে এমনটাই জানা গিয়েছে তদন্ত করার পর। এই টাকার অঙ্ক আরো বেশি ছাড়া কম হবে না।
অন্যান্য বারের তুলনায় কেনো এবার দুর্নীতি বেশি?
প্রতি বারই এই পোস্ট অফিসের নিয়োগে দুর্নীতি হলেও এবারে তার পরিমাণ অনেক বেশি। তবে এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, রাজ্যে 2014-2015 সালে শেষ বারের মতো একটি স্বচ্ছভাবে এখানে নিয়োগ হয়েছিল। কারণ সেবারই শেষ বারের মতো অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন জমা পড়ে। এবং অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার জন্য অসাধু চাকরি প্রার্থীরা তখন দুর্নীতি সেভাবে করতে পারেনি বলে নিয়োগ ক্ষেত্রে সেরকম দুর্নীতি সামনে আসেনি। তবে এর পর থেকেই অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন জমা পড়ার ফলে ডকুমেন্ট যাচাইয়ের সুযোগ কমে যায় যার ফলস্বরূপ দুর্নীতির ডানা গজাতে শুরু করে দুর্নীতিগ্রস্ত চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে। আরেকটি কথা বলা যায় যে বিগত 2-3 বছরের নিয়োগে পশ্চিমবঙ্গের এই পোস্ট বিভাগের নিয়োগে মাধ্যমিক এর জাল মার্কশিট এ অনেক নম্বর নিয়ে আবেদন করত বেশ কয়েকজন বিহার ও উত্তর প্রদেশের চাকরি প্রার্থীরা। তারা ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন এর সময় আসত না বলে শুধু শুধু অনেক শূন্যপদ নষ্ট হয়ে পড়ে থাকত। কিন্তু পরবর্তীতে এবার দুর্নীতির হাত ধরেই সেই শূন্যপদে অনেক টাকা খরচ করে চাকরি পেত রাজ্যের কিছু অসাধু চাকরি প্রার্থীরা। কিন্তু এখন রাজ্যের সেইসব রকম চাকরি প্রার্থীরা নিজেরাই জাল মার্কশিট বের করে এখন নিয়োগ ক্ষেত্রে সরাসরি অংশগ্রহণ করছে অনেক অনেক নম্বর নিয়ে।
নিয়োগে দুর্নীতির ফলাফল কি হচ্ছে?
এর ফলে রাজ্যের যোগ্য ও উপযুক্ত চাকরি প্রার্থীরা নিয়োগ পাচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের অনেক চাকরি প্রার্থী রয়েছে যাদের মাধ্যমিকের নম্বর ভালো মোটামুটি 80 থেকে 90 শতাংশের ঘরে। তবুও তারা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ অসাধু ও দুর্নীতিগ্রস্ত চাকরি প্রার্থীদের জাল মার্কশিট এ নম্বরের ছড়াছড়ি, প্রায় 95 শতাংশের উপরই থাকে তাদের নম্বর। অতি সত্ত্বর এমন দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়োগ যদি বন্ধ না হয় তবে চাকরি ক্ষেত্রগুলোতে সুযোগ পাবে বহু অযোগ্য ও অনুপযুক্ত প্রার্থীরা এবং দিন দিন সরকারি চাকরি থেকে বিশ্বাস হারাতে শুরু করবেন রাজ্যের বহু শিক্ষিত ও সৎ চাকরি প্রার্থীরা।
OFFICIAL WEBSITE: CLICK HERE
MORE WB GOVT JOB: CLICK HERE
প্রতিনিয়ত চাকরির খবর ও আপডেট পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলের সঙ্গে আজই যুক্ত হন।